অ্যান্ড্রয়েডমোবাইল ফোন টিপস ও ট্রিকস

Virtual RAM কী? ভার্চুয়াল র‍্যাম কীভাবে কাজ করে? সুবিধা ও অসুবিধা

র‍্যাম স্মার্টফোনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা সকলেরই জানা। কিন্তু ভার্চুয়াল র‍্যাম বা এক্সটেন্ডেড র‍্যাম তুলনামূলকভাবে নতুন ধারণা।

ভার্চুয়াল র‍্যাম, ডাইনামিক র‍্যাম এক্সপ্যানশন, এবং এক্সটেন্ডেড র‍্যাম এগুলো সবই একই জিনিসের ভিন্ন নাম যা বিভিন্ন স্মার্টফোন ব্র্যান্ড ভিন্নভাবে ব্যবহার করে। ভিভো প্রথম তাদের X60 সিরিজের ফোনে “ভার্চুয়াল র‍্যাম” নামে এই ফিচারটি চালু করে।

পরবর্তীতে Realme, Xiaomi, Oppo, OnePlus, iQOO, ইত্যাদি ব্র্যান্ডও বিভিন্ন নামে একই ফিচার ব্যবহার শুরু করে। আজকের পোস্টে আমরা ভার্চুয়াল র‍্যাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

Virtual RAM কী?

র‍্যাম হলো একটি সাময়িক মেমোরি যা ফোনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যাকগ্রাউন্ডে চলার সময় ডেটা সংরক্ষণ করে। এটি একটি হার্ডওয়্যারের উপাদান হলেও ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করে ফোনের স্টোরেজের একটি অংশ র‍্যাম এর ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ব্যবহার করা যায়।

উদাহরণস্বরূপ আপনার যদি 8GB র‍্যাম + 128GB স্টোরেজ সহ একটি ফোন থাকে এবং 5GB ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করার সুযোগ থাকে তাহলে আপনার ফোনে কার্যকরভাবে 13GB র‍্যাম এবং 123GB স্টোরেজ থাকবে।

ভার্চুয়াল র‍্যাম কীভাবে কাজ করে?

আমরা সকলেই জানি, স্মার্টফোনে দুই ধরণের মেমরি ব্যবহার করা হয় যথা: র‌্যাম এবং ইন্টারনাল স্টোরেজ। র‌্যাম অ্যাপ্লিকেশন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় ডেটা সাময়িকভাবে সংরক্ষণ করে যখন ইন্টারনাল স্টোরেজ ফটো, ভিডিও, অ্যাপ্লিকেশন এবং অন্যান্য ডেটা স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করে।

কিন্তু সম্প্রতি স্মার্টফোন ব্র্যান্ডগুলো একটি নতুন ধারণার প্রবর্তন করেছে যা ভার্চুয়াল র‌্যাম নামে পরিচিত। ভার্চুয়াল র‌্যাম আসলে ইন্টারনাল স্টোরেজের একটি অংশ যা র‌্যামের মতো কাজ করে। যখন ফোনের র‌্যাম পূর্ণ হয়ে যায় তখন ভার্চুয়াল র‌্যাম অতিরিক্ত মেমরি সরবরাহ করে যা মোবাইলের অ্যাপ্লিকেশন মসৃণভাবে চালাতে সাহায্য করে।

ভার্চুয়াল র‍্যাম এর ব্যবহারের উদাহরণ

আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ধরা যাক ১০টি অ্যাপ চলছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আপনার ফোনের মূল র‍্যামে আর কোনো স্পেস খালি নেই। এই অবস্থায় কী হবে? ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা অ্যাপ ও ডায়নামিক টাস্কসমূহের মধ্যে সবার আগে চালু করা এক বা একাধিক অ্যাপ ক্লোজ হয়ে যাবে। এই বিরক্তিকর অভিজ্ঞতা আমরা কমবেশি সবাই পড়েছি।

এই সমস্যার আদর্শ সমাধান হলো ভার্চুয়াল র‍্যাম। যেসব অ্যাপের ব্যাকগ্রাউন্ডে কোনো ডায়নামিক ফাংশন নেই সেসব অ্যাপকে ব্যাকগ্রাউন্ডে দীর্ঘসময় ধরে রাখতে ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহৃত হয়। গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপগুলো অ্যান্ড্রয়েড সিস্টেম নিজ থেকে র‍্যামে রাখবে আর বাকি অ্যাপসমূহ ভার্চুয়াল র‍্যামে সংরক্ষিত থাকবে।

এই ব্যবস্থার ফলে ব্যবহারকারীরা নিরবিচ্ছিন্ন অভিজ্ঞতা পাবেন। অ্যাপগুলো বারবার রিলোড করার প্রয়োজন হবে না ফলে ফোনের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পাবে।

ভার্চুয়াল র‍্যামের সুবিধা কী?

ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজের একটি অংশকে ব্যবহার করে ভার্চুয়াল র‌্যাম তৈরি করা যায়। এটি ফিজিক্যাল র‌্যামের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। ভার্চুয়াল র‌্যাম এনাবেল করলে ফোনের ইন্টারনাল স্টোরেজে ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ ডাটা স্টোর হতে শুরু করে।

ফলে ফিজিক্যাল র‌্যামে জায়গা ফাঁকা হয়ে যায় এবং ব্যাকগ্রাউন্ডে অনেক বেশি অ্যাপ একসঙ্গে চালানো সম্ভব হয়। তবে প্রথমবার ভার্চুয়াল র‌্যাম এনাবেল করার পরে ফোন রিস্টার্ট করতে হবে।

এই ফিচার ব্যবহারের জন্য কোনো অতিরিক্ত খরচ করতে হবে না। ফোনের সাথে বিনামূল্যে এই ফিচার ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে ভার্চুয়াল র‌্যাম এনাবেল করার জন্য ইন্টারনাল স্টোরেজে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে।

পারফর্মেন্সের বিচারে ফিজিক্যাল র‌্যাম ভার্চুয়াল র‌্যামের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকে। কারণ ফিজিক্যাল র‌্যামের স্পিড ভার্চুয়াল র‌্যামের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়াও ভার্চুয়াল র‌্যাম এনাবেল করলে ইন্টারনাল স্টোরেজে জায়গা কমে যায়।

ভার্চুয়াল র‍্যামের অসুবিধা কী?

ভার্চুয়াল র‍্যাম যদিও মোবাইলের র‍্যামের পরিমাণ বাড়ানোর একটি উপায় তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। প্রথমত ভার্চুয়াল র‍্যামকে মোবাইলের আসল র‍্যামের মতো ব্যবহার করা সম্ভব নয়। এর ব্যবহারে কিছুটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফোনের অভ্যন্তরীণ র‍্যাম যেভাবে ব্যবহার করা হয় ঠিক একইভাবে ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করা যাবে না।

ভার্চুয়াল র‍্যাম সবসময় মোবাইলের আসল র‍্যামের মতো সাপোর্ট নাও দিতে পারে। এটা অনেকটা গুগল ড্রাইভের মতো স্পেস সুবিধা প্রদান করবে।

এই ভার্চুয়াল র‍্যামের ধারণা অনেক আগের। কিছু সীমাবদ্ধতার কথা চিন্তা করে এই র‍্যামের সিস্টেম বাজারে আনা হয়েছিল না। তবে ফাইভজি প্রযুক্তি আসার বিষয়টি বিবেচনা করে ভার্চুয়াল র‍্যাম সিস্টেম বাজারে এসেছে।

অ্যান্ড্রয়েড ফোনে কি র‍্যাম বাড়ানো সম্ভব?

সম্প্রতি অনেকেই ফোনের র‍্যাম বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ২ জিবি র‍্যামের ফোন ৪ জিবি র‍্যামে আপগ্রেড করার কথা শোনা যায় প্রায়শই। রুট করা ফোনে “র‍্যাম এক্সপেন্ডার” এর মতো অ্যাপ ব্যবহার করে মেমোরি কার্ড বা ইন্টারনাল স্টোরেজের অংশকে র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়।

কিন্তু এই পদ্ধতি কি সত্যিই ফোনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে? উত্তর হলো না। মেমোরি কার্ড বা ইন্টারনাল স্টোরেজ র‍্যামের মতো দ্রুত নয়। ফলে একই সাথে দুই ধরনের র‍্যাম ব্যবহার করলে ফোনের রিড এবং রাইট স্পিডে অসামঞ্জস্যতা দেখা দেয়।

র‍্যামে প্রচুর পরিমাণে ডেটা রিড ও রাইট করা হয়। মেমোরি কার্ড এতো বেশি রিড ও রাইট করার জন্য তৈরি করা হয় না। ফলে দীর্ঘদিন ধরে মেমোরি কার্ডকে র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করলে তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যাবে। একইভাবে ইন্টারনাল স্টোরেজ ব্যবহার করলেও তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

পরিশেষে ফোনের র‍্যাম বাড়ানোর এই পদ্ধতিটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং অকার্যকর। ফোনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য র‍্যাম বাড়ানোর চেয়ে নতুন ফোন কেনাই বুদ্ধিমানের কাজ।

ভার্চুয়াল র‍্যাম কি আপডেটের মাধ্যমে বাড়ানো যায়?

যদি আপনার কেনা ফোন কোম্পানি নতুন আপডেটে ভার্চুয়াল র‍্যাম বাড়ানোর ফিচারটি আনে তাহলে বাড়াতে পারবেন। তবে মোবাইল কেনার আগেই সাধারণত কত জিবি পর্যন্ত র‍্যাম বাড়ানো যাবে সেই বিষয়টি উল্লেখ করা থাকে।

 

পরিশেষে

আমাদের অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিন দিন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে। কিন্তু সীমিত র‍্যামের কারণে, আমরা প্রায়শই অ্যাপ সুইচিং, রিলোডিং এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের মতো সমস্যার সম্মুখীন হই। ভার্চুয়াল র‍্যাম এই সমস্যা সমাধানের এক নতুন সম্ভাবনা।

ভার্চুয়াল র‍্যাম ফোনের অব্যবহৃত স্টোরেজ স্পেসকে র‍্যাম হিসেবে ব্যবহার করে। এর ফলে আমরা আরও বেশি অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু রাখতে পারি মাল্টিটাস্কিং আরও সহজ হয়ে যায় এবং অ্যাপগুলো দ্রুত লোড হয়।

ভার্চুয়াল র‍্যাম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে তবে এর সম্ভাবনা অনেক। ভবিষ্যতে ভার্চুয়াল র‍্যাম অ্যান্ড্রয়েড ফোনের কর্মক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।

আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। এছাড়া ভার্চুয়াল র‍্যাম সম্পর্কে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টের মাধ্যমে আমাদের জানান।

ধন্যবাদ সবাইকে।

Blog Park BD

Blog Park BD হলো বাংলা ভাষার শিক্ষা মূলক একটি ওয়েবসাইট। এখানে অনলাইনে আয়, কম্পিউটার ও ল্যাপটপ, অ্যান্ড্রয়েড, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ, মোবাইল ফোন রিভিউ, শিক্ষা, প্রযুক্তি, ইন্টারনেট, রেজাল্ট, এসইও, চাকরি, ব্লগিং, ওয়ার্ডপ্রেস, মোবাইল ফোন টিপস ও ট্রিকস, স্বাস্থ্য, লাইফস্টাইল, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ইউটিউব থেকে আয়, ফেসবুক থেকে আয়, ভিসা ও পাসপোর্ট, ই-সার্ভিস ইত্যাদি বিষয়ে ব্লগ লিখা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button