ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো ২০২৫
বাংলাদেশে বেকারত্ব একটি বড় সমস্যা। তবে ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং এই সমস্যার সমাধানে বর্তমানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। অনেকেই এখন ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করছেন এবং নিজের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।
ফ্রিল্যান্সিং এমন একটি কাজ যেখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বা স্থানে কাজ করতে হয় না। আপনি যখন সময় পাবেন যেখানে ইচ্ছা সেখান থেকে কাজ করতে পারবেন। এ জন্য দরকার শুধু নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা।
ফ্রিল্যান্সিং এবং আউটসোর্সিংয়ের জগৎ অনেক বড়। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারবেন যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফটো এডিটিং, ভিডিও ক্রিয়েট ও এডিটিং এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন।
এছাড়াও ওয়েবসাইট ডিজাইন, কোডিং, এনিমেশন ক্রিয়েট এবং ব্লগিংয়ের মতো কাজগুলোও ফ্রিল্যান্সিংয়ের আওতায় পড়ে। প্রতিটি কাজের জন্য আপনাকে আলাদা দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তবে একবার দক্ষ হয়ে গেলে আপনার আয়ের সুযোগও বেড়ে যাবে।
যারা ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি নির্দিষ্ট ফিল্ডে দক্ষতা অর্জন করা। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি ভিডিও এডিটিংয়ে পারদর্শী হন তাহলে ভিডিও এডিটিংয়ের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কাজ খুঁজে পেতে পারবেন।
আবার যদি আপনি ওয়েব ডিজাইন বা কোডিং শিখেন তাহলে এসব কাজের জন্য অনলাইনে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আজকের পোস্টে আমরা ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। অতএব দেরী না করে চলুন আমাদের আজকের আলোচনা শুরু করি।
ফ্রিল্যান্সিং কি?
ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) হচ্ছে এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন কাজ করে আয় করতে পারবেন। তবে এটি সাধারণ চাকরির মতো নয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিশেষত্ব হলো এখানে আপনি নিজেই নিজের বস।
আপনি কখন কাজ করবেন বা করবেন না সেটি সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ আপনার কোনো নির্দিষ্ট অফিস টাইম নেই। যদি কোনো দিন কাজ করার ইচ্ছা না থাকে তাহলে আপনি বিরতি নিতে পারেন আবার যখন ইচ্ছা তখন কাজ শুরু করতে পারবেন।
সাধারণ চাকরিতে আপনাকে একটি নির্দিষ্ট অফিসে বা প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত থাকতে হয়। এছাড়াও সেখানে একজন নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তার অধীনে কাজ করতে হয়। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি নির্দিষ্ট কোনো অফিসে কাজ করেন না বরং আপনার বাড়িই আপনার অফিস হিসেবে কাজ করে।

এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোনো নিয়োগকর্তা থাকে না বরং যখন যিনি আপনাকে কাজ দিবেন তিনি তখন আপনার নিয়োগকর্তা হবেন। আপনি বিভিন্ন প্রজেক্টের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন বায়ারের সাথে কাজ করবেন।
ফ্রিল্যান্সিংয়ের আরেকটি সুবিধা হলো এটি আপনাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেবে। আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে যেকোনো দেশের বায়ারদের জন্য কাজ করতে পারেন। শুধুমাত্র ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন।
এছাড়া ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আপনি আপনার দক্ষতার ভিত্তিতে ভালো আয় করতে পারেন। দক্ষতার কদর সারা বিশ্বে রয়েছে বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে। আপনি যদি দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হন তাহলে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ এমনকি তিনগুণ বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
সাধারণ চাকরির তুলনায় ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে আয়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি বিশেষ করে যদি আপনার বিশেষ দক্ষতা থাকে।
ফ্রিল্যান্সিং অনেকের জন্য একটি দারুণ পেশা হতে পারে যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান এবং নিজের সময় নিজের মতো করে চালাতে চান। এজন্য আপনাকে নির্দিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতে হবে না।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো?
ধরুন আপনি আপনার একাডেমিক শিক্ষা শেষ করে একটি ব্যাংকে ব্যাংকার হিসেবে যোগ দিলেন। একই সময়ে আপনার এক বন্ধু একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে একাউন্টেন্ট হিসেবে যোগদান করলো।
এখন যদি আমি বলি যে আপনি এবং আপনার বন্ধু দু’জনেই চাকরিজীবী তাহলে কি কথাটি ভুল হবে? না, এটা একদমই সঠিক। আবার যদি আমি বলি আপনি একজন ব্যাংকার এবং আপনার বন্ধু একজন একাউন্টেন্ট এটাও সঠিক। কারণ আপনাদের দুজনেরই পেশা ভিন্ন হলেও উভয়েই চাকরিজীবী।
ঠিক একইভাবে ফ্রিল্যান্সিং ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটে। কেউ হয়তো গ্রাফিক ডিজাইনার, কেউ ওয়েব ডিজাইনার, আর কেউ হতে পারেন ডিজিটাল মার্কেটার। সবার পেশা ভিন্ন হলেও সবাই ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিত। ফ্রিল্যান্সিং মানেই একটি নির্দিষ্ট কাজ করা কিন্তু সেই কাজের ধরন বা ক্ষেত্র আলাদা হতে পারে।
এখন যদি কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করে “কিভাবে চাকরি করা শেখা যায়?” আপনি কি সরাসরি এর কোনো উত্তর দিতে পারবেন? সম্ভবত না কারণ চাকরি করাটা শেখার বিষয় নয় বরং সেটা নির্ভর করে আপনি কী ধরনের কাজ করছেন তার ওপর।
চাকরি করার জন্য যেমন একটি নির্দিষ্ট দক্ষতা প্রয়োজন হয় তেমনি ফ্রিল্যান্সিং করার জন্যও নির্দিষ্ট কিছু দক্ষতা অর্জন করা জরুরি।
ফ্রিল্যান্সিং শেখার বিষয়টি ঠিক তেমনই। ফ্রিল্যান্সিং নিজেই কোনো বিষয় নয় যা আলাদাভাবে শেখা যায়। এর মানে হলো আপনাকে কোনো নির্দিষ্ট কাজে দক্ষ হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি গ্রাফিক ডিজাইন শিখতে চান তাহলে সেই বিষয়ে ভালোভাবে দক্ষ হতে হবে।
আবার যদি আপনি ওয়েব ডেভেলপমেন্ট বা ডিজিটাল মার্কেটিং শিখতে চান আপনাকে সেই ক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে হবে। দক্ষতা অর্জনের পরই আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে পারবেন।
তাহলে ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চাইলে মূলত আপনাকে প্রথমে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ধরনের কাজ করতে চান। সেই কাজের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এবং দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এরপর সেই কাজের মাধ্যমে আপনি ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ শুরু করতে পারবেন।
ফ্রিল্যান্সিং শেখার অর্থ হলো নির্দিষ্ট একটি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন করা। আপনি যে কাজেই দক্ষ হন না কেন সেটিই আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করার মূল চাবিকাঠি।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ সমূহ
ফ্রিল্যান্সিং কাজের নির্দিষ্ট কোনো প্রকারভেদ না থাকলেও বেশ কিছু জনপ্রিয় এবং চাহিদাসম্পন্ন কাজ রয়েছে। এসব কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং জ্ঞান থাকলে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে খুব সহজেই আয় করা সম্ভব। নিচে কিছু সাধারণ এবং জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজের তালিকা দেওয়া হলো:
১. ওয়েবসাইট ডিজাইন
ওয়েবসাইট ডিজাইনারদের কাজ হলো বিভিন্ন ব্যবসায়, প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির জন্য আকর্ষণীয় এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি ওয়েবসাইট তৈরি করা। এ কাজের জন্য HTML, CSS এবং গ্রাফিক ডিজাইন সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
২. ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট
ওয়েব ডেভেলপাররা ওয়েবসাইটের কাঠামো এবং ফাংশনালিটি তৈরি করেন। এই কাজের জন্য প্রোগ্রামিং ভাষা যেমন: JavaScript, PHP, Python ইত্যাদি জানা দরকার। অনেক ব্যবসায়িক ওয়েবসাইট বা ই-কমার্স সাইট ডেভেলপমেন্টের জন্য ওয়েবসাইট ডেভেলপারদের প্রয়োজন হয়।
আরও পড়ুন: অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি? অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করার উপায় 2025
৩. মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট
মোবাইল অ্যাপ ডেভেলপারদের কাজ হলো iOS এবং Android এর জন্য অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা। এই কাজের জন্য Objective-C, Swift এবং Java বা Kotlin এর মতো প্রোগ্রামিং ভাষার জ্ঞান থাকা আবশ্যক।
৪. গ্রাফিক্স ডিজাইন
গ্রাফিক্স ডিজাইনাররা বিভিন্ন ডিজাইন কাজ করে থাকেন যেমন: লোগো, ব্যানার, সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিজাইন ইত্যাদি। Adobe Photoshop, Illustrator এর মতো টুলসের দক্ষতা এখানে কাজে লাগে।
৫. ভিডিও এডিটিং
ভিডিও এডিটররা বিভিন্ন ভিডিওর শুটিং, এডিটিং এবং ফাইনাল আউটপুট প্রস্তুত করেন। এই কাজের জন্য Adobe Premiere Pro, Final Cut Pro বা DaVinci Resolve এর মতো টুলস সম্পর্কে জ্ঞান থাকা জরুরি।
৬. কন্টেন্ট রাইটিং
কন্টেন্ট রাইটাররা বিভিন্ন ব্লগ, আর্টিকেল, প্রোডাক্ট রিভিউ ইত্যাদি লেখার কাজ করেন। SEO (Search Engine Optimization) সম্পর্কে জ্ঞান থাকা কন্টেন্ট রাইটারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজাররা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল পরিচালনা করে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, লিংকডইন ইত্যাদি মাধ্যমে কনটেন্ট পোস্ট গ্রাহকদের প্রশ্নের উত্তর এবং ব্র্যান্ডিং নিয়ে কাজ করা মুলত সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজারদের কাজ।
৮. ডাটা এন্ট্রি
ডাটা এন্ট্রি ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন ডেটাবেসে তথ্য সংযোজন ও পরিচালনার কাজ করেন। সাধারণত কম্পিউটার ব্যবহার এবং টাইপিং দক্ষতা এ কাজে প্রয়োজন হয়।
৯. ডাটা এনালিসিস
ডাটা অ্যানালিস্টরা বিভিন্ন সংস্থার জন্য তথ্য বিশ্লেষণ করেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করেন। এ কাজের জন্য ডাটা অ্যানালিসিস টুলস যেমন: Excel, Power BI, Tableau এবং প্রোগ্রামিং জ্ঞান যেমন: Python বা R জানা দরকার।
১০. সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশন (SEO)
SEO বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে উচ্চস্থানে নিয়ে আসার জন্য কাজ করেন। কিওয়ার্ড রিসার্চ, ব্যাকলিংকিং, এবং অন-পেজ SEO নিয়ে জ্ঞান থাকলে এই কাজে সফল হওয়া যায়।
১১. ডিজিটাল মার্কেটিং
ডিজিটাল মার্কেটাররা বিভিন্ন ব্যবসার অনলাইন মার্কেটিং পরিকল্পনা করেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। ডিজিটাল মার্কেটাররা সাধারণত ফেসবুক, গুগল অ্যাডস এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপন প্রচার করেন।
১২. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্ট
ভার্চুয়াল অ্যাসিস্টেন্টরা সাধারণত বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজ করেন যেমন: ইমেইল পরিচালনা, ক্যালেন্ডার ম্যানেজমেন্ট এবং ডকুমেন্ট প্রিপারেশন। তারা ব্যবসার দৈনন্দিন কাজগুলো সহজ করতে সাহায্য করে।
এছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং এর অনেক ধরনের কাজ রয়েছে যা সময়ের সাথে আরও নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। আপনি যদি কোনো বিশেষ ক্ষেত্রের দক্ষতা অর্জন করেন তবে আপনি সহজেই ফ্রিল্যান্সিং জগতে প্রবেশ করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ কিভাবে পাবো?
ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে কাজ পেতে হলে কিছু কৌশল এবং নিয়ম মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রিল্যান্সিং এখন অনেক জনপ্রিয় একটি পেশা যেখানে অসংখ্য মানুষ কাজ করছে। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে একজন ক্লায়েন্ট কেন আপনাকেই কাজ দিবে?
এর উত্তর পেতে হলে আপনাকে কিছু বিষয় ভালোভাবে বুঝতে হবে এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।
প্রথমে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোতে ক্লায়েন্টদের সাথে আপনার যোগাযোগ দক্ষতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ক্লায়েন্টদের সাথে সহজে ও পরিষ্কারভাবে কথা বলতে পারা একটি বড় গুণ।
কাজের প্রস্তাব দেওয়ার সময় আপনাকে এমনভাবে মেসেজ বা প্রপোজাল পাঠাতে হবে যাতে তারা বুঝতে পারেন আপনি কাজটি কতটা দক্ষতার সঙ্গে করতে পারবেন। তাছাড়া আপনি যে কাজ করতে যাচ্ছেন সেই কাজের বিষয়ে সঠিক ধারণা এবং অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক।
ফ্রিল্যান্সিং কাজটি শুধু শুরু করলেই হবে না বরং তা মানসম্পন্নভাবে শেষ করাও গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি কোন কাজ হাতে নেন তখন সেটি সময়মতো এবং যত্নসহকারে শেষ করার চেষ্টা করুন। ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট করা এবং তাদের প্রত্যাশা পূরণ করাই আপনার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।
আপনি যদি আপনার কাজের মান বজায় রাখতে পারেন তাহলে সেই ক্লায়েন্ট ভবিষ্যতেও আপনাকে কাজ দিতে আগ্রহী হবে।
এছাড়া বায়ারের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করা অত্যন্ত জরুরি। যখন আপনি কোন ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করেন তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং পেশাদারী সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করবেন।
এ ধরনের সম্পর্ক ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে আপনার দীর্ঘমেয়াদি সফলতার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বায়ারের আস্থা অর্জন করলে তারা বারবার আপনার কাছে কাজ পাঠাবে এবং আপনাকে অন্য ক্লায়েন্টদেরও সুপারিশ করতে পারে।
ফ্রিল্যান্সিং একটি ধৈর্যের এবং ধারাবাহিকতার পেশা। আপনি প্রথমে হয়তো খুব বেশি কাজ পাবেন না তবে ধীরে ধীরে যদি ভালোভাবে কাজ করে যেতে পারেন এবং ক্লায়েন্টদের সন্তুষ্ট করতে পারেন তাহলে কাজের সুযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে।
তাই মনোযোগ, নিষ্ঠা এবং পেশাদারিত্বের সাথে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করুন তাহলে সফল হওয়ার পথ খুলে যাবে।
সেরা ফ্রিল্যান্সিং সাইট কোনগুলো?
ফ্রিল্যান্সিং এখন ঘরে বসে টাকা আয়ের অন্যতম জনপ্রিয় উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো বয়সের মানুষ বিনিয়োগ ছাড়াই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। বর্তমান সময়ে যেখানে কর্মসংস্থানের প্রতিযোগিতা বেড়েছে সেখানে ফ্রিল্যান্সিং স্বস্তির একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
তবে যেহারে ফ্রিল্যান্সার ও ফ্রিল্যান্সিং সাইট বাড়ছে সেখানে নতুনদের জন্য এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা সহজ নয়। সঠিক মার্কেটপ্লেস বেছে নিয়ে সেখানে দক্ষতা দেখানো এবং কাজ পাওয়ার কৌশল শিখে নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিচে ৫ টি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেস নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. আপওয়ার্ক
আপওয়ার্ক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে একটি। এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ পাবেন যেমন: কন্টেন্ট রাইটিং, ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ডাটা এন্ট্রি ইত্যাদি।
আপওয়ার্কের মাধ্যমে আপনি সরাসরি ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন এবং প্রজেক্ট বেসিসে কাজ করতে পারবেন। নতুনদের জন্য এখানে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা প্রতিযোগিতা থাকলেও অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে কাজ পাওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
২. ফাইভার
ফাইভার হলো এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি মাত্র ৫ ডলার থেকে কাজ শুরু করতে পারেন। এটি নতুনদের জন্য বেশ সহজ এবং স্বল্প মূল্যের কাজের জন্য আদর্শ।
এখানে ছোট ছোট কাজ যেমন লোগো ডিজাইন, আর্টিকেল লেখালেখি, ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি কাজ করে আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারবেন।
৩. ফ্রিল্যান্সার ডট কম
ফ্রিল্যান্সার ডট কম একটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেখানে আপনি যে কোনো ধরনের কাজের প্রস্তাব পেতে পারেন। এটি নতুনদের জন্য দারুণ একটি প্ল্যাটফর্ম কারণ এখানে নতুন এবং ছোট প্রজেক্ট থেকে শুরু করে বড় প্রজেক্টের সুযোগও থাকে।
আপনি বিড করে প্রজেক্ট জিততে পারবেন এবং ধীরে ধীরে আপনার প্রোফাইল গড়ে তুলতে পারবেন।
৪. পিপল পার আওয়ার
এই সাইটটি ফ্রিল্যান্সারদের ঘন্টা হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়। আপনি আপনার কাজের ধরন অনুযায়ী ঘন্টাপ্রতি রেট নির্ধারণ করতে পারবেন। পিপল পার আওয়ারে নতুনদের জন্য ঘন্টাভিত্তিক কাজ শুরু করে নিজেদের দক্ষতা বাড়ানোর ভালো সুযোগ রয়েছে।
৫. গুরু ডট কম
গুরু ডট কম আরেকটি জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেখানে নতুনরা সহজেই কাজ শুরু করতে পারেন। এখানে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের কাজের সুযোগ থাকে এবং প্রফেশনাল ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। গুরু ফ্রিল্যান্সারদের নিরাপদ পেমেন্ট সিস্টেম প্রদান করে যা নতুনদের জন্য বেশ উপকারী।
প্রতিটি মার্কেটপ্লেসের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে তবে সবারই মূল লক্ষ্য এক ফ্রিল্যান্সার এবং ক্লায়েন্টদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করা এবং কাজের মাধ্যমে উভয়েরই লাভবান হওয়া। আপনি যদি ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়তে চান তবে এই সাইটগুলোতে একাউন্ট খুলে কাজ শুরু করতে পারেন।
ফ্রিল্যান্সিং এর টাকা কিভাবে তুলতে হয়?
ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় তোলার অনেক উপায় রয়েছে যা আপনার সুবিধা এবং ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে পারেন। প্রতিটি পদ্ধতিই আলাদা আলাদা সুবিধা দেয় তাই আপনাকে এমন একটি পদ্ধতি বেছে নিতে হবে যা আপনার জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক ও সহজ।
নিচে কয়েকটি জনপ্রিয় উপায় দেওয়া হলো।
১. স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার: ফ্রিল্যান্সিং থেকে উপার্জিত অর্থ সরাসরি আপনার স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো সম্ভব। Payoneer, Wise, Skrill ইত্যাদি সেরা কয়েকটি ব্যাংক সিস্টেম।
২. ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন: ফ্রিল্যান্সিং আয় উত্তোলনের আরও একটি সহজ পদ্ধতি হলো ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা। এতে করে আপনি আপনার আয় ATM থেকে সরাসরি উত্তোলন করতে পারেন।
৩. ওয়্যার ট্রান্সফার: কিছু ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম সরাসরি ওয়্যার ট্রান্সফারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর সুবিধা দেয়। এই পদ্ধতিটি নির্ভরযোগ্য এবং নিরাপদ তবে কিছুটা সময়সাপেক্ষ হতে পারে। সাধারণত বড় অংকের অর্থ স্থানান্তরের জন্য ওয়্যার ট্রান্সফার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে আপনার আরোও কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।
ধন্যবাদ সবাইকে।