পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৫
পাসপোর্ট করার নিয়ম বর্তমানে অনেক সহজ ও সুসংগঠিত করা হয়েছে যেন সাধারণ মানুষ সহজে ও দ্রুত পাসপোর্ট করতে পারে। ই-পাসপোর্টের প্রবর্তনের মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া এখন আরও আধুনিক এবং নিরাপদ হয়েছে।
তবে পাসপোর্ট তৈরি করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রক্রিয়া মেনে চলতে হয়। পাসপোর্ট করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, আবেদন ফি এবং পাসপোর্ট তৈরির জন্য যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হয় তা নিয়ে সচেতন থাকা অত্যন্ত জরুরি।

তাই আজকের পোস্টে আমরা পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? পাসপোর্ট করার নিয়ম আলোচনা করবো। অতএব দেরী না করে চলুন শুরু করি।
নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
নতুন পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং আবেদন প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি ধাপে বিভক্ত। পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও ডকুমেন্ট প্রস্তুত রাখতে হবে।
এখানে ধাপে ধাপে কী কী প্রয়োজন, পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং কীভাবে আবেদন করতে হবে তা বিস্তারিত তুলে ধরা হলো:
১. জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) কার্ডের কপি
নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে হলে আপনার নিজস্ব জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) কপি জমা দিতে হবে। NID কার্ড আপনার জাতীয় পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে যা বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদান করা হয়। এটি বাধ্যতামূলক এবং এর কপিটি আবেদনপত্রের সাথে জমা দিতে হবে।
২. নাগরিক সনদপত্র
যদি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের ঠিকানা মিলে না যায় তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিক সনদপত্র জমা দিতে হবে। এই সনদপত্র আপনার স্থায়ী ঠিকানা ও পরিচয় নিশ্চিত করবে।
৩. ইউটিলিটি বিলের কাগজ
আপনার বর্তমান বাসস্থানের প্রমাণ হিসেবে সাম্প্রতিক কোন ইউটিলিটি বিলের কপি জমা দিতে হবে। এটি হতে পারে: বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিল, টেলিফোন বিল ইত্যাদি। এই বিলের কপি আপনার বাসস্থানের ঠিকানা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
৪. অনলাইন আবেদন সারাংশ (Summary)
পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে গেলে প্রথমে অনলাইনে নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করতে হবে। আবেদন ফর্মটি পূরণ করার পর আপনি একটি সারাংশ ডাউনলোড করতে পারবেন। এই সারাংশে আপনার আবেদন সংক্রান্ত সব তথ্য থাকবে এবং এটি আবেদনের জন্য জমা দিতে হবে।
৫. অনলাইন আবেদন ফর্মের প্রিন্ট কপি (৩ পৃষ্ঠার কপি)
আপনার অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করার পর আবেদন ফর্মটি প্রিন্ট করে নিতে হবে। সাধারণত এটি ৩ পৃষ্ঠার হয়। এই প্রিন্ট কপিটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে মালয়েশিয়া ভিসা চেক করার নিয়ম 2025
৬. আবেদন ফি ব্যাংক ড্রাফট এবং চালানের কপি
নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদান করার পর আপনি একটি ব্যাংক ড্রাফট বা চালান পাবেন। সেই চালানের কপিটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
৭. শিক্ষার্থীদের জন্য স্টুডেন্ট কার্ড বা সনদপত্র
যদি আপনি শিক্ষার্থী হন তবে আপনাকে আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃক প্রদানকৃত স্টুডেন্ট আইডি কার্ড বা শিক্ষাগত সনদপত্রের কপি জমা দিতে হবে। এটি আবেদনে শিক্ষার্থীর প্রমাণ হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
৮. পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি (ঐচ্ছিক)
যদি আপনার প্রয়োজন হয় তবে আপনার পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে পারেন। এটি সাধারণত ঐচ্ছিক তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পাসপোর্ট অফিসে এটি প্রয়োজন হতে পারে।
৯. বিবাহিত হলে নিকাহনামা
যদি আপনি বিবাহিত হন তবে আপনার বিয়ের সনদ (নিকাহনামা) জমা দিতে হবে। এটি আপনার বিবাহের প্রমাণ হিসেবে আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে।
পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৫
বাংলাদেশে নতুন পাসপোর্ট করতে হলে অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে পাসপোর্ট করার নিয়ম নির্দেশনা দেওয়া হলো:
ধাপ ১: আঞ্চলিক অফিস ও থানা নির্বাচন
প্রথমে পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য ePassport.gov.bd ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন। পেজটি লোড হলে আপনার জেলা এবং থানার নাম নির্বাচন করুন। এই ধাপটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে হবে কারণ এটি আপনার পাসপোর্ট প্রসেসিং অফিসের লোকেশন নির্ধারণ করবে।

ধাপ ২: ই-মেইল ভেরিফিকেশন
আঞ্চলিক অফিস এবং থানা নির্বাচন করার পরে আপনাকে আপনার ই-মেইল ভেরিফাই করতে হবে। এ জন্য প্রথমে আপনার ই-মেইল ঠিকানা দিন এবং রোবট ভেরিফিকেশনের জন্য ক্যাপচা পূরণ করুন। এরপর ‘Continue’ বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার ই-মেইলে একটি ভেরিফিকেশন লিংক পাঠানো হবে। সেই লিংকে ক্লিক করে আপনার ই-মেইল ঠিকানাটি ভেরিফাই করুন। ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পরে আপনি পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম পূরণের জন্য পরবর্তী ধাপে যেতে পারবেন।
ধাপ ৩: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ
ই-মেইল ভেরিফিকেশনের পর আবার ePassport.gov.bd ওয়েবসাইটে লগইন করুন এবং “Apply for a New Passport” অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনি যে ধরনের পাসপোর্ট চান তা নির্বাচন করতে হবে।
যদি আপনি সাধারণ পাসপোর্ট করতে চান তবে “Ordinary” নির্বাচন করুন। সরকারি কাজে পাসপোর্ট করতে চাইলে “Official” নির্বাচন করুন। এরপর “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করে পরবর্তী ধাপে যান।
ধাপ ৪: ব্যক্তিগত তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করুন
এই ধাপে আপনাকে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য যেমন আপনার নাম, জন্ম তারিখ, পিতামাতার নাম, এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। সকল তথ্য অবশ্যই ইংরেজিতে পূরণ করতে হবে। তথ্য পূরণের পর “Save and Continue” বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: আইডি ডকুমেন্টস
এই ধাপে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টের তথ্য প্রদান করতে হবে। যদি আপনার পূর্বে কোনো পাসপোর্ট থাকে তবে তা উল্লেখ করতে হবে। “Yes” নির্বাচন করুন যদি আপনি আগের কোনো পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন।
যদি এটি আপনার প্রথম পাসপোর্ট হয় তবে “No, I don’t have any previous/ handwritten passport” নির্বাচন করুন। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের নম্বর প্রদান করতে হবে।
ধাপ ৬: অন্যান্য তথ্য ও ছবি আপলোড
এই ধাপে আপনাকে আপনার বর্তমান পাসপোর্ট সাইজের ছবি, স্বাক্ষর এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে। ছবি আপলোডের সময় নিশ্চিত করতে হবে যেন ছবিটি সঠিক ফরম্যাট এবং মাপের হয়।
আরও পড়ুন: ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগে | ভিসা আবেদনের নিয়ম ২০২৫
ধাপ ৭: ফি প্রদান
পাসপোর্ট আবেদন সম্পন্ন করার পর, আপনাকে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। ফি প্রদান করা যায় বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংকের মাধ্যমে। ফি জমা দেওয়ার পরে আপনার আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং পাসপোর্ট প্রস্তুতির প্রক্রিয়া শুরু হবে।
ধাপ ৮: সাক্ষাৎকার এবং বায়োমেট্রিক
ফি প্রদান করার পর আপনাকে নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক ডাটা যেমন ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ এবং সাক্ষাৎকার দিতে হবে। এই তথ্য সংগ্রহের পর আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে।
ধাপ ৯: পাসপোর্ট সংগ্রহ
সকল ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনাকে একটি মেসেজ বা নোটিফিকেশন পাঠানো হবে পাসপোর্ট সংগ্রহের জন্য। সেই নোটিফিকেশন পাওয়ার পরে আপনি নির্ধারিত পাসপোর্ট অফিস থেকে আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
উপরের ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে খুব সহজেই ২০২৫ সালে পাসপোর্ট করতে পারবেন।
বাচ্চাদের পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৫
এখানে শিশুদের (১৫ বছরের নিচে) জন্য নতুন পাসপোর্ট করার নিয়ম এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হলো:
বাচ্চাদের পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া
শিশুদের জন্য নতুন পাসপোর্ট আবেদন করতে প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে:
- অনলাইনে আবেদনকৃত ফর্মের প্রিন্ট কপি: অনলাইনে ফর্ম পূরণ করার পর সেটির প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করতে এখানে ভিজিট করুন: passport.gov.bd ।

2. ২ কপি রঙিন ছবি: শিশুদের পাসপোর্ট আবেদনের জন্য ৫৫ মিমি × ৪৫ মিমি সাইজের ২ কপি রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
3. জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা জন্ম সনদের অনলাইন ভেরিফাইড কপি: শিশুদের ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম সনদের অনলাইন ভেরিফাইড কপি জমা দিতে হবে।
অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র (১৫ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে)
শিশুর বয়স ১৫ বছরের নিচে হলে পাসপোর্ট আবেদনের জন্য কিছু অতিরিক্ত কাগজপত্র প্রয়োজন হয়। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
- বাংলাদেশী জন্ম সনদ: শিশুর জন্ম যদি বাংলাদেশে না হয়ে থাকে তাহলে দূতাবাস থেকে বাংলাদেশী জন্ম সনদ সংগ্রহ করা যাবে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য দূতাবাসের “জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট” ট্যাব ভিজিট করতে পারেন।
- পিতামাতার পাসপোর্ট কপি: শিশুর পাসপোর্ট আবেদন করার সময় পিতামাতার পাসপোর্টের কপিও জমা দিতে হবে।
- পিতামাতার রঙিন ছবি: পিতামাতার রঙিন ছবি জমা দিতে হবে যার সাইজ হবে ৩০ মিমি × ২৫ মিমি এবং ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড অবশ্যই সাদা হতে হবে।
দূতাবাসের কন্স্যুলার কাউন্টারের সময়সূচী
শিশুদের পাসপোর্ট আবেদন এবং অন্যান্য কাজের জন্য দূতাবাসের কন্স্যুলার কাউন্টার নির্দিষ্ট সময় অনুসরণ করে। কাগজপত্র জমা ও পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য নিচের সময়সূচী মেনে চলতে হবে:
কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট গ্রহণ: প্রতিদিন সকাল ৯.৩০ থেকে দুপুর ১২.৩০ পর্যন্ত।
কাগজপত্র এবং পাসপোর্ট বিতরণ: প্রতিদিন বিকাল ৩.৩০ থেকে ৪.৩০ পর্যন্ত।
FAQ
১. কত বছর বয়সে পাসপোর্ট করা যায়?
যেকোনো বয়সেই বাংলাদেশী পাসপোর্টের জন্য আবেদন করা যায়। শিশুদের জন্য জন্মের পরপরই পাসপোর্ট করা সম্ভব। ১৫ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের পিতামাতার পাসপোর্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
২. পাসপোর্ট করতে কত দিন লাগে?
বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার সময়সীমা নির্ভর করে পাসপোর্টের ধরণ ও আবেদন পদ্ধতির ওপর। তবে কত দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যায় তা নিচে উল্লেখ করা হলো।
- সাধারণ (Regular) পাসপোর্ট: ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে পাওয়া যায়।
- অতি জরুরি (Express) পাসপোর্ট: ৫-৭ কার্যদিবসের মধ্যে পাওয়া যায়।
তবে কাগজপত্র সঠিকভাবে জমা দেওয়া না হলে বা কোনো সমস্যা হলে এই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে সৌদি ভিসা চেক 2025
৩. পাসপোর্ট করার খরচ কত?
পাসপোর্টের জন্য খরচও নির্ভর করে পাসপোর্টের ধরণ এবং সময়ের ওপর। বর্তমানে বাংলাদেশে পাসপোর্ট করার জন্য খরচ নিম্নরূপ:
- সাধারণ (Regular) পাসপোর্ট: ৩,৪৫০ টাকা (৫ বছর মেয়াদি)।
- জরুরি (Express) পাসপোর্ট: ৬,৯০০ টাকা (৫ বছর মেয়াদি)।
- অতি জরুরি (Super Express) পাসপোর্ট: ১২,০০০ টাকা (৫ বছর মেয়াদি)।
দ্রষ্টব্য: ১৫ বছরের নিচে শিশুদের জন্য পাসপোর্ট করার নিয়ম এর ক্ষেত্রে কিছু ভিন্নতা থাকতে পারে।
পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কিত আমাদের আজকের আলোচনা এই পর্যন্তই। এছাড়া পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করুন।