জন্ম নিবন্ধন ও NIDই-সেবা

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ২০২৫ | ভোটার হতে কি কি লাগে

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ২০২৫ – এই বছর যারা ১৮ পূর্ণ করছেন, তাদের জন্য এটি এক দারুণ সুযোগ। কীভাবে আপনি সহজেই অনলাইনে বা সরাসরি অফিসে গিয়ে ভোটার হতে পারবেন ২০২৫ সালে, সে সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

নতুন ভোটার হতে কি কি কাগজপত্র লাগবে, নতুন ভোটার আবেদনের প্রতিটি ধাপ কী, বা ভোটার আইডি কার্ড হাতে পেতে কতদিন অপেক্ষা করতে হতে পারে এমন সব জরুরি তথ্য আজকের পোষ্টের মধ্যে পাবেন। নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ২০২৫ সংক্রান্ত আপনার সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আজকের আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।

সূচিপত্র

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ২০২৫

নতুন ভোটার হওয়া মানে শুধু একটা কার্ড পাওয়া নয়, এটা হচ্ছে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনার নিজের পরিচয় তুলে ধরা। বাংলাদেশে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ২০২৫ সালের হিসেবে নিবন্ধনের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে অনলাইনভিত্তিক।

এজন্য আপনাকে নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে যেতে হবে এবং আপনি একজন নতুন ভোটার হিসেবে (ফরম-২) পূরণ করুন।

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য যোগ্যতা

  • আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে এবং বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে।
  • পূর্বে ভোটার তালিকায় নাম থাকা যাবে না, এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে।

ভোটার হতে কি কি কাগজপত্র লাগে ২০২৫

বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আপনার ভোটার হতে কি কি কাগজপত্র লাগতে পারে ২০২৫  সালে এসে সে সম্পর্কে নিচে দেওয়া হলো।

ভোটার হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (১৭ ডিজিটের)।
  • পিতা বা মাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এর ফটোকপি।
  • শিক্ষাগত সনদ (যদি প্রযোজ্য হয়), ইউটিলিটি বিল (ঠিকানা প্রমাণের জন্য) এবং নাগরিকত্ব সনদ।
  • বিবাহিত মহিলাদের ক্ষেত্রে স্বামীর এনআইডি ফটোকপি।

ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া

  • নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে গিয়ে ফরম-২ পূরণ করতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র স্ক্যান করে আপলোড করতে হবে।
  • তথ্য যাচাই শেষে নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে বায়োমেট্রিক ডেটা (আঙুলের ছাপ, ছবি ও স্বাক্ষর) সংগ্রহ করতে হবে।
  • কোনো ফি প্রদান করতে হয় না।

ভোটার হওয়ার জন্য প্রতিবন্ধী ও অসুস্থদের জন্য বিশেষ সুবিধা

  • প্রতিবন্ধী বা গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের বাড়ি থেকে নিবন্ধনের ব্যবস্থা রয়েছে।
  • ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য নেওয়া শেষ হলেও, যারা তখন তথ্য দিতে পারেননি, তারা পরে সরাসরি নিবন্ধন কেন্দ্রে গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

আরও পড়ুনঃ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন আবেদন করার নিয়ম ২০২৫

অনলাইনে ভোটার আবেদন করার নিয়ম

আপনি একজন ভোটার হিসেবে অনলাইনে নিবন্ধন করতে চাইলে, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (EC) নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। নিচে ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি বর্ণনা করা হলোঃ

১. ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

  • আপনি সবার প্রথমে যান https://services.nidw.gov.bd
  • এটি নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল সেবা পোর্টাল।

২. নতুন অ্যাকাউন্ট তৈরি করুন

  • Create Account বা নতুন অ্যাকাউন্ট করুন অপশনে ক্লিক করুন।
  • আপনার নাম, জন্ম তারিখ এবং একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন।
  • একটি OTP (ভেরিফিকেশন কোড) মোবাইলে আসবে, সেটি দিয়ে অ্যাকাউন্ট নিশ্চিত করুন।

৩. লগইন করুন

  • রেজিস্ট্রেশনের পর আপনার মোবাইল ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লগইন করুন।

৪. নতুন ভোটার আবেদন ফর্ম পূরণ করুন

  • Apply for New NID বা নতুন ভোটার হিসেবে আবেদন অপশন বেছে নিন।
  • আপনার জন্ম তারিখ, ঠিকানা, পিতা-মাতার নাম, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য দিন।
অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন
অনলাইনে ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন

৫. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপলোড করুন

  • জন্ম সনদ / শিক্ষাগত সনদের স্ক্যান কপি।
  • পিতা/মাতার NID নম্বর।
  • ঠিকানার প্রমাণ (যেমনঃ ইউটিলিটি বিল বা বাড়িভাড়া চুক্তিপত্র)

নোটঃ বর্তমান আপডেট অনুযায়ী কাগজপত্র নাও লাগতে পারে। লাগলে সেটা ওয়েবসাইটেই প্রদর্শিত হবে।

আরও পড়ূনঃ ভিসা আবেদন করতে কি কি লাগে | ভিসা আবেদনের নিয়ম ২০২৫

৬. ছবি ও স্বাক্ষর দিন

  • ছবি ও ডিজিটাল স্বাক্ষর আপলোড করতে বলা হতে পারে, না হলে তা অফিসে গিয়ে করা হবে।

৭. আবেদন সাবমিট করুন

  • সব তথ্য পূরণ হয়ে গেলে সাবমিট করুন এবং প্রিন্ট কপি রাখুন।
  • আবেদন সাবমিট করার পর আপনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবেন বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের জন্য।
নতুন ভোটার ফরম ডাউনলোড
নতুন ভোটার ফরম আবেদন কপি

৮. স্থানীয় অফিসে যাচাই ও ছবি তোলা

  • নির্ধারিত সময়ে আপনার উপজেলা নির্বাচন অফিসে গিয়ে ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ ও চোখের স্ক্যান (বায়োমেট্রিক) সম্পন্ন করুন।

নতুন ভোটার আবেদন ফরম ডাউনলোড

২০২৫ সালে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন ফরম ডাউনলোড করা এখন আগের চেয়ে আরও সহজ। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই ফরমটি পাওয়া যায়, যা পূরণ করলেই শুরু হয়ে যাবে আপনার ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়া। ফরম এর সরাসরি লিংকঃ PDF ডাউনলোড। এবং ফর্মটি দেখতে হয়বে এমন-

নতুন ভোটার ফর্ম ডাউনলোড
নতুন ভোটার ফর্ম ডাউনলোড

ডাবল ভোটার বা দুইবার ভোটার হলে করণীয়

ডাবল ভোটার হওয়াটা কিন্তু সত্যিই একটা গুরুতর ব্যাপার। যদি কেউ ইচ্ছে করে দুবার ভোটার হোন, এটা আইনত অপরাধ। এর শাস্তি হিসেবে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ড প্রযোজ্য, এটা মাথায় রাখবেন।

তবে যদি আপনার ভুলবশত এমন হয়ে থাকে, তাহলে ভয় না পেয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিন। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা আপনার উপজেলা অফিসে যান। সেখানে গিয়ে আপনার অতিরিক্ত আইডি বাতিলের আবেদন করুন।

আরও পড়ূনঃ বাটন ফোন কোনটা ভালো? | বাংলাদেশের সেরা ১০টি বাটন ফোন

একটি লিখিত আবেদনপত্রে ভুলের কারণ বুঝিয়ে ক্ষমা চাইতে হবে। প্রমাণও লাগতে পারে। কমিশন আপনার উদ্দেশ্য যাচাই করবে। আন্তরিক ভুল হলে মাফ পেতে পারেন, নয়তো আইনগত ব্যবস্থা হতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে ১৬১২৩ এ কল করুন।

নতুন ভোটার হতে কত টাকা লাগে

আমাদের বাংলাদেশে আপনি নতুন ভোটার নিবন্ধন সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করতে পারবেন। নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও স্থানীয় অফিসে কোনো ফি ছাড়াই আবেদন করা যায়। তবে হারানো বা নষ্ট এনআইডি কার্ড পুনরায় ইস্যু করতে ২৩০-৪৬০ টাকা ফি আমার জানা মতে লাগতে পারে, যা নতুন ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

ভোটার আইডি কার্ড পেতে কতদিন লাগে

বাংলাদেশে নতুন ভোটার নিবন্ধন শেষে সাধারণত ২১ থেকে ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার ভোটার আইডি কার্ড পেতে পারেন। বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমে আবেদন করলে সর্বোচ্চ মাস লাগতে পারে।

অনলাইনে আবেদন ও বায়োমেট্রিক ডেটা জমা দিলে ১-৩ মাস মধ্যে এসএমএসের মাধ্যমে এনআইডি নম্বর জানানো হয়। কার্ড ডাউনলোডের জন্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা সার্ভিসেস.এনআইডি.গভ.বিডি ব্যবহার করুন। কোনো ফি প্রদান করতে হয় না।

এনআইডি কার্ডের তথ্য কিভাবে সংশোধন করা যায়

বাংলাদেশে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) এর তথ্য সংশোধন করা যায় অনলাইন বা সরাসরি নির্বাচন অফিসে আবেদন করে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে http://www.nidw.gov.bd বিস্তারিত নির্দেশনা রয়েছে।

এনআইডি কার্ডের তথ্য সংশোধন করার প্রধান ধাপসমূহ

  • অনলাইন আবেদনঃ services.nidw.gov.bd এ লগইন করে সংশোধনযোগ্য তথ্য (নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা) এডিট করুন।
  • প্রমাণপত্র জমাঃ সংশোধনের স্বপক্ষে এসএসসি সনদ, জন্ম নিবন্ধন, ইউটিলিটি বিল বা বিবাহনামার সত্যায়িত কপি আপলোড করুন।
  • ফি-পরিশোধঃ সংশোধনের ধরন অনুযায়ী ১০০-৫০০ টাকা মোবাইল ব্যাংকিং (বিকাশ/নগদ/রকেট) মাধ্যমে জমা দিন।
  • তদন্ত ও অনুমোদনঃ আবেদন যাচাই শেষে ২৫-৩০ কর্মদিবসে সংশোধিত কার্ড ডাউনলোড করুন সার্ভিসেস.এনআইডি.গভ.বিডি থেকে।

FAQ:

ভোটার কেন হবো? ভোটার হলে কি কি সুবিধা?

আপনি ভোটার হলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন। ভোটার হলে এনআইডি কার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসপোর্ট, সিম নিবন্ধনসহ নানা সরকারি সেবা নিতে পারবেন।

আরও পড়ুন: পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে? পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৫

নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি?

অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ, পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, নাগরিকত্ব সনদ ও ইউটিলিটি বিল (ঠিকানা প্রমাণে) প্রয়োজন। বিবাহিত মহিলাদের স্বামীর এনআইডি ফটোকপি লাগে।

ভোটার হওয়ার সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা কি? এবং যারা ছাত্র তারা পেশা কি দিবে?

দেখুন, ভোটার হতে কিন্তু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা আবশ্যক নয় একদমই। বাংলাদেশের নাগরিক, বয়স ১৮ বা বেশি, মানসিকভাবে সুস্থ এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা হলেই আপনি ভোটার হতে পারবেন। আর যারা ছাত্র, তারা পেশা হিসেবে Student ই উল্লেখ করবেন। এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য পেশা হিসেবেই গণ্য হয় নির্বাচন কমিশনের রেকর্ডে।

ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স কত?

বাংলাদেশে ভোটার হওয়ার সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর। জন্মনিবন্ধনে বয়স ১৮ পূর্ণ হলেই আবেদন করা যায়।

ভোটার এলাকা কি পরিবর্তন করা যায়?

হ্যাঁ, স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করে ভোটার এলাকা বদলানো যায়। এজন্য নতুন ঠিকানার প্রমাণপত্রসহ ফরম-২ জমা দিতে হয়।

নতুন ভোটার আবেদন সম্পর্কিত আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আমরা চেষ্টা করি আপনাদের প্রত্যেকটি কমেন্ট পড়ার এবং সেগুলোর উত্তর দেওয়ার। পোস্টটি ভাল লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন এবং আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তী কোনো আর্টিকেলে আবার কথা হবে।

Md Mehedi Hassan

আমি মেহেদি হাসান। BlogParkBD.com এর একজন নিয়মিত লেখক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button